বসন্তের কবিতা : Bosonter Kobita

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। আর বসন্তকে ঋতুর রাজা বা ঋতুরাজ বসন্ত বলা হয়। সে জন্য যুগে যুগে কবি সাহিত্যিকরা বসন্তকে ঘীর বিভিন্ন ধরনের কবিতা লিখি গেছেন। এখানে আমরা বিভিন্ন কবিদের জনপ্রিয় ২০টি বসন্তের কবিতা শেয়ার করব। এই কবিতাগুলো পড়ে আপনি এক দিকে যেমন বসন্তের আমেজ উপভোগ করবেন, অন্যদিকে কবিতার বিভিন্ন অংশের মাধ্যমে আপনার প্রিয়জনকে বসন্তের শুভেচ্ছাও জানাতে পারবেন।
বসন্তের কবিতা : Bosonter Kobita




ফাল্গুন ও চৈত্র এই দুই মাস মিলে বসন্তকাল। বসন্তকালে কোকিল ডাকে, বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটে, গাছের পাতা ঝরে নতুন পাতা গজায়। সেই সাথে আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ থাকে বিধায় এই সময়টা আমরা খুব বেশি উপভোগ করে। বসন্তের এত গুন থাকার কারনে বসন্তকে ভালোবেসে কবিগণ বসন্তের কবিতা লিখতে পেরেছিলে, যেটা অন্য কোন ঋতুকে নিয়ে সম্ভব হয়নি।

আরো পড়ুন—

বসন্তের ২০টি কবিতা

বাংলাদেশে বসন্তের অসংখ্য কবিতা রয়েছে। এগুলো থেকে এখানে আমরা বাছাই করে সেরা ২০টি বসন্তের কবিতা সংগ্রহ করেছি। বিশেষকরে এখানে বসন্তের প্রেম ও ভালোবাসার কবিতাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আশাকরি কবিতাগুলো পড়লে আপনার ভালো লাগবে।

1

বসন্ত বন্দনা
—নির্মলেন্দু গুন

হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা –দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক।

এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরণ,
মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে
অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে মৃত্তিকার বুকে
নিমজ্জিত হতে চায়। হায় কী আনন্দ জাগানিয়া।

এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতোই ফেরাই চোখ,
যতোই এড়াতে চাই তাকে দেখি সে অনতিক্রম্য।
বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্য খানি
নবীন পল্ববে, ফুলে ফুলে। বুঝি আমাকেও শেষে
গিলেছে এ খল-নারী আপাদমস্তক ভালোবেসে।

আমি তাই লঘুচালে বন্দিলাম স্বরুপ তাহার,
সহজ অক্ষরবৃত্তে বাঙলার বসন্ত বাহার।

2

তুই কি আমার তুমি হবে?
—সজিব হোসেন

তুই কি আমার তুমি হবি?
সাজসকালে শিশির ভেজা
সদ্য ফোটা গোলাপ হবি?

তুই কি আমার আকাশ হবি?
হাজার তারায় ছেয়ে থাকা
সাদা মেঘের ছায়ায় ঢাকা,
কৃষ্ণ পক্ষের আধার মাখা,
দূর নিলীমায় আমার হবি?
তুই কি আমার তুমি হবি??

তুই কি আমার চন্দ্র হবি?
শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদের মায়া,
বাঁকা চাঁদের আলো ছায়া
তুই কি আমার মেঘ হবি?
সাদা মেঘের ভেলা হবি?
তুই কি আমার তুমি হবি?

3

ফুল ফুটুক না ফুটুক
—সুভাষ মুখোপাধ্যায়

ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।

শান-বাঁধানো ফুটপাথে
পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে
হাসছে।

ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়ে
তারপর খুলে –
মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়ে
তারপর তুলে –
যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে চলে গেছে
যেন না ফেরে।

গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে
একটা দুটো পয়সা পেলে
যে হরবোলা ছেলেটা
কোকিল ডাকতে ডাকতে যেত
তাকে ডেকে নিয়ে গেছে দিনগুলো।

লাল কালিতে ছাপা হলদে চিঠির মত
আকাশটাকে মাথায় নিয়ে
এ-গলির এক কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ে
রেলিঙে বুক চেপে ধ’রে
এই সব সাত-পাঁচ ভাবছিল –

ঠিক সেই সময়
চোখের মাথা খেয়ে গায়ে উড়ে এসে বসল
আ মরণ ! পোড়ারমুখ লক্ষ্মীছাড়া প্রজাপতি !

তারপর দাড়ম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ।
অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে
দড়িপাকানো সেই গাছ
তখন ও হাসছে।

4

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
—রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,
এই সংগীত-মুখরিত গগনে
তব গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো।
এই বাহির ভুবনে দিশা হারায়ে
দিয়ো ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।

অতি নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে
আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে–
দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া
আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।
মোর পরানে দখিন বায়ু লাগিছে,
কারে দ্বারে দ্বারে কর হানি মাগিছে,
এই সৌরভবিহ্বল রজনী
কার চরণে ধরণীতলে জাগিছে।

ওগো সুন্দর, বল্লভ, কান্ত,
তব গম্ভীর আহ্বান কারে।

5

ফাল্গুনে রাঙ্গা প্রেম
—তাৎপর্যহীন উৎপল

আমি তোমার প্রেমে পড়েছি
হয়নি বলা কখনো
দেবীতূল্য তোমার ঐ রূপে হয়েছি মাতাল
মুক্তি মেলেনি আজো,,
আমার যতো প্রেমের কবিতা
লিখেছি তোমায় নিয়ে
যতো আমার ভালোবাসার গান
তুমি আছো সুর হয়ে।

তোমায় নিয়ে কষেছি আমার
জীবন সুখের অংক
শিউলী পুষ্পে গেঁথেছি মাল্য
তোমার গলে পরাব,,
তুমি আমার ফাল্গুনের
আগুন রাঙা ফুল
টকটকে লাল শিমুল ফুলে
দেখি তোমার রূপ।

আমার অশ্রু এবং কষ্ট রাশি থেকে
তুমি ফোটাও মিষ্টি ফুল
আমার দীর্ঘশ্বাস থেকে
তুমি বিকশিত করো বৃষ্টির রিমঝিম সুখ,,
তুমি আমার হ্রদয় নদীতে
সুমধুর কল্লোল
তোমার জন্য বহে এ বুকে
হিমেল সমীরন।

আমার যতো পুজা অর্চনা
আছে যতো আরাধনা
তোমার তরে ওহে দেবী
করেছি নিবেদন,,
ভালোবাসার এই মধুর ফাল্গুনে
ওহে মোর প্রীয়া
আমি তোমার প্রেমে পরেছি
খুলে দাও তোমার হিয়া।

6

ফাল্গুনের দ্বিপদী
—আফরোজা অদিতি

ফিঙে পাখি পুচ্ছ নাচায় ফড়িং নাচে ফুলে
ফাগুন মাসে বসন্ত বায়ে মনটা ওঠে দুলে

দীঘির জলে মুখ দেখে ওই চাঁদনি ছাওয়া আকাশ
বুকের মাঝে ঢেউ তুলে এই ফাগুন রাতের বাতাস

ফাগুন মাসে কুহু ডাকে শিমুল ফোটে গাছে
পূর্ণ শশী জোছনা ছড়ায় নক্ষত্র তার পাশে

ফুলের বনে তারার মেলা পাপড়ি খুলে হাসে
ফাগুন বাতাস ঝিরিঝিরি সুখের হাওয়া ভাসে

চাঁদের রূপে অপরূপা পালিয়ে গেছে বুড়ি
ফাগুন রঙা হৃদয় নিয়ে উড়ছে রঙিন ঘুড়ি

ফাগুন রাতে নদীর জলে চাঁদনি ফেলে ছায়া
মাঝির সুরে বাতাস ভাসে ধরার বুকে মায়া

ফাগুন দিনে রঙিন ফুল ফোটে মনের বাগে
মন পুড়িয়ে প্রেমে তাই হালতি পাখি ডাকে।

7

ফাল্গুনে জোছনা ভেজা পূর্ণিমা রাতে

ফাগুনের জোছনা ভেজা পূর্ণিমা রাতে
ঝিরি ঝিরি দখিনা বাতাস !
বদ্ধ কুঠুরি ছেড়ে খোলা জানালায় এসে দাঁড়ালাম,
নাতিশীতোষ্ণ মধ্য রাতে ঈষৎ আনন্দ এসে
মিতালী করিয়ে দিল পরিণত চাঁদ আর জোছনার সাথে।
আমি যেন হারিয়ে গেলাম প্রকৃতির মাঝে
আরাম কেদারার কোলে ন্যুজদেহ এলিয়ে দিলাম,
নিজের অজান্তেই সঙ্গী হয়ে গেল স্মৃতিরাও এসে
জমে গেল মাধবী রাত নিঃসঙ্গতা ভেঙ্গে।

আজ আর প্রেমের কোন সংজ্ঞা নাই,
নির্মল আকাশ জুড়ে তারকার মত
সুখের স্বপ্ন এসে হৃদয়ের মাঝে
মিশে গিয়ে ফাগুনের কামনার সাথে
গড়েছে অপূর্ব বাসর মোহনীয় রাগে !
একদা আমি ও প্রেমিক ছিলাম,
ফুলশয্যার রজনী পেরিয়ে এসেছি কতটা পথ-
শঙ্খচিলের মত ফিরে যেতে চায় মন
অথচ আজ আর অবারিত নয় দ্বার !

তবু ও ইচ্ছে করে আবারও কিশোর বেশে
কিশোরী বধুকে নিয়ে পাটাতনে শুয়ে শুয়ে সাগরে ভাসি,
আবার কিষাণ বেশে কিষাণীরে পাশে নিয়ে
মন চায় উঠোন জুড়ে মাদুরেই শয্যা পাতি,
স্মৃতির মিনারে চেপে স্বপ্নের দেশ ঘুড়ে
অভিসারে চুপি চুপি বেড়িয়ে আসি,
এমনও মোহিনী রাতে মন চায় প্রেয়সীরে
হৃদয় নিংড়ে তারে আরও ভালবাসি।
কখন যে তন্দ্রা এসে চোখ দু'টো গেল ছুঁয়ে
সুখের স্বপ্ন এসে খুলে দিল মনের দুয়ার।

8

ফাল্গুন চলে গেল
—বিপ্লবী বিপ্লব

ফাল্গুন চলে গেল তবুও ফুটেনি গোলাপ
প্রচন্ড শীতের কুহেলী চাদরে,
নগ্ন নৃত্ত নেচেছিল শেষ বারে।।

দখিনা বাতাস বয়েছিল তবুও দোলেনি শাখা
পাখায় ভর করে আসেনি প্রজাপতি,
জ্বলেনি জোনাকির মিটমিটে বাতি।।

রক্তিম আভা বিকশিত হয়নি যৌবনে
পিদিমের আলোর ন্যায় রিমঝিম,
সম্ভাবনা ও ছিলনা সীমিত-অসীম।।

অথবা, গভীর রাতের সুবাসিত শিউলি
নিচে পড়ে রয়েছে আজ,
নেই সুবাস নেই সাজ।।

কুঁহু কুঁহু ডাক শুনেছিলাম নিরবে
শুনিনি আহ্বান প্রেমের,
শুধুই পূর্নতা একাকীত্বের।

9

ফাল্গুনের ভালোবাসা
—মারুফ আহম্মেদ অন্তর

ফাগুনেরই আগুনলাগা
বসন্তেরই ক্ষণ
বলতে পারো কার জন্য
উদাস করে মন।
কার জন্য একলা সময়
কাটছে সারাবেলা
কার জন্য শুধু শুধু
সইছি দুখের জ্বালা।
কাটছে সময় কার জন্য
একলা প্রতিদিন
কার জন্য অপেক্ষা
করবো চিরদিন?
ফাগুনের ভালোবাসা
কোথায় গেলে পাব
নেইতো কেহ হাত বাড়িয়ে
তার কাছে যে যাব!

10

তুমি চেয়েছিলে বসন্ত
—মিজানুর রহমান

তুমি চেয়েছিলে বসন্ত!
আমি বুকের সব পাজর ঝরালাম
নতুন পাতায় পাতায়
বসন্তের গানে গানে
তুমি আসবে বলে।

তুমি চেয়েছিলে বাসন্তী শাড়ী!
শূন্য বুক বিছালাম বন-অরণ্যে
নানা ফুলে ফুলে, বাসন্তী রং’য়ে
তুমি জড়াবে বলে।

তুমি চেয়েছিলে শুনতে-
কোকিলের কুহু-কুহু ডাক!
আমি আগুন ছড়ালাম
পালাশ ও শিমুলের ডালে
কোকিলের কুহু-কুহু ডাকে
তুমি মুগ্ধ হবে বলে।

এই ফাল্গুনে সাঝিয়েছি অঞ্জলি
আমার হৃদয়ের থালা ভরে
দেঁখা হোক, আঁদর হোক
ভালোবাসায়-
দু’টি হৃদয় একটি থালায়
শিমুল ও পলাশের ফুলে ফুলে।

11

ফাল্গুনের অগ্নিপরণ
—অনিরুদ্ধ বুলবুল

সাগর পাড়ের নন্দিনী গো, ছুঁয়েছে কি প্রাণে
ফাগুনের অগ্নিপরশ? উঠে এসো তবে এইক্ষণে -
সেতার শ্রবণে ক্লান্তি কেন? শান্তির অন্বেষণে –
হেসে চলো; বলো কথা ত্রিতারের মূর্ছনাতেই!

আকাশ গঙ্গায় শালুক পুড়ে হৃদয়ে ধরি
নোনতা জমিনের সোদা-গন্ধ মাখি
সুরভি ছড়াও কেতকী-কেশরে অহর্নিশ
জোনাকের অগ্নিপাখায় ঝলসে দাও মোরে।

ভালবাসার গন্ধমদিরা ভাসাও অশোকে শিমুলে
জ্বালাও আলোকরাশি হেন খদ্যোতিকা সম
বিমোহিত সুধা ছড়াও পরাগে পরাগে আর;
আস্তিনে খুঁজি হেথা সোহাগের নীল চিহ্ন তোমার!

পেলব কামনার অতন্দ্র প্রহরে কবে
গেয়েছিলো নদী শিমুল ও পলাশ পাদমূলে?
বীথিকা বনানীর ছায়ময় ঐশ্বর্যে দেখো
লুটায় ফাগুন কৃষ্ণচুড়ার তটিনী ঘিরে।

সোমত্ত সময়ের নদীজলে তির-তিরে হাওয়া
যদি প্রণয়ের স্বরলিপি রচে সোহাগের আঙিনায়,
আামদের চাওয়া পাওয়ায়, তবে উঠে এসো -
ভালবাসার সান্ধ্য-সংলাপে মিশি একাকার হয়ে!

12

প্রেম ফাগুনের হাওয়া
—আব্দুল করিম

প্রেম ফাগুনের হাওয়া যখন
লাগে বন্ধু গায়
উদাস হয়ে যায়রে বন্ধু
মন যে তোমার নায় ,
তোমায় ভালবাসতে চায়রে বন্ধু
কাছে পেতে চায়।

হাসি খুশি মুখখানি নিয়ে
আসো যখন সামনে
হৃদয় আমার বাসর রাত্রি
কাঁটায় সঙ্গপনে ,
তোমায় আদর করতে চায়রে বন্ধু
পাশে রাখতে চায়।

তোমার পায়ের ধূলো পরে যখন
আমার আঙ্গিনায়
ধন্য আমার ভালবাসা
ফুল ফোঁটা মন বাগিচায়,
আমার বাকি জীবন চায়রে বন্ধু
তোমার থাকতে চায়।

13

প্রতীক্ষার ফাল্গুন
—জুন

আজ পহেলা ফাল্গুনের
এই ফুরফুরে শান্ত বিকেলে,
যেদিকেই ফেরাই চোখ, একরাশ
মিরাসে ভর করে, পাশে এসে দাঁড়াও তুমি!
প্রিয় ফ্রেমে বাঁধানো সব স্ফুরন্ত
ভালোবাসা আজ উল্লসিত, বিদীর্ণ হৃদয়
এখনো প্রার্থনা করছে, তুমি আসবে।
সেই প্রতীক্ষায় ভর
করে সাজায়েছি পূজোর ঢালা,
কতো স্তব স্তব ফুল পড়ে কাঁদে অন্তহীন শূন্যতায় -
প্রতীক্ষার পর প্রতীক্ষা, এক ঋতুর পর অন্য ঋতুর খেলা।

শেষান্তে মেলেনি তোমার ভ্রুকুটিরও দেখা।
অনুভবে শুধুই বরফের মত জমে গেছি,
প্রলাপে অন্ধ হয়ে গেছি। তুমি আসো নি।
মানবের প্রেমে রূপসীও রয় নি স্থির!
মুকূলে পচন ধরে, এসেছে নূতন পাখি।
উড়েও গেছে। ক্লান্ত কোকিল ভুলেছে গান।
দেখতে দেখতে আমারও মিলায়েছে শোভা।
উড়ন্ত জীবন আর ফাল্গুন নেই। নেই ফুলেল বসন্ত।
এখন সে বৃদ্ধ শীত। ক্লান্ত অবসর। নরম হাত আজো
তবু হাতরে বেড়ায় যৌবন - ভালোবাসার
প্রিয় ফাল্গুনী!

14

ফাল্গুনের রং লেগেছে
—পবিত্র বিশ্বাস

ফাগুনের রঙ লেগেছে দিক্‌ হতে দিক্‌ অন্ত,
এরই মাঝে ঝংকৃত হয় খুবসুরৎ বসন্ত।
আশমান জমিন মিশে গেছে বসন্তেরই পরশে,
সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে অকাল প্রেমের আবেশে।
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার প্রাণে লাগে খুশির দোলা,
ফাগুনেরই রঙের সাথে চলে হোলি খেলা।
ভালোবাসার জোয়ার ওঠে বসন্তের কূলে,
সেই জোয়ারে যুব-যুবতীর প্রাণ ওঠে দুলে।
এরই সাথে চতুর্দিকে রঙিন ফুলের সারি,
ফুলের ছটায় ফাগুন বনে চোখ ফেলতে নারি।
চোখে চোখে কত কথা কত না ইশারা,
দুটি হৃদয় এক হয়ে যায় হয় না কভু ছাড়া।
বঙ্গদেশের কোলে মোরা হিন্দু-মুসলমান,
একই বৃন্তে দুটি কুসুম এক মায়েরই দান।
তাই তো মোদের ভালোবাসা বিশ্বে সবার জানা,
প্রেম সায়রে হারিয়ে গেলেও কেউ করে না মানা।

15

ফাল্গুন রংয়ের স্বপ্নগুলো
—নাজমুছ ছায়াদত (সবুজ)

হঠাৎ কানে এল
কোকিলের ধ্বনি ,
শিমুল পলাশের
সে কি জাগরণী ।
চারদিকে রঙ্গে ভরা
আহা ফাল্গুন ,
বসন্ত চিৎকারে
ফাঁড়ে আকাশ জমিন ।
গলা ছেড়ে আজ বলি
ভালবাসি সখি
এনেছি কনকলতা
মেলে দেখ আঁখি ।
সুমধুর সুরে আজ
কে ডাকে হায়,
একেই কি ফাগুনের
ভালবাসা কয়?
প্রকৃতির একি রূপ
মোহনীয় মায়া,
রঙ লাগে নয়নে
হৃদয়ছোঁয়া ।
সোনার আলোয় আজ
এ ফাগুন মাসে
জেগে ওঠো স্বপ্নচারীনী
আগুন ভালোবেসে ।

16

ফাল্গুনের হাসি
—হুমায়ুন কবির

ফাল্গুনের ছোঁয়ায় প্রকৃতিতে নব রুপ আসে,
ফুল-পাখী আর তরুলতা আনন্দে সব হাসে।

টুকটুকে লাল শিমুল হাসে, হাসে পলাশ ফুল,
গাছে গাছে কচি পাতা হাসিতে মশগুল।

রং বেরঙের বন ফুল হাসে হাওয়ার তালে,
হাসি মুখে প্রজাপতি উড়ে রঙ্গীন ডানা মেলে।

কোকিল হাসে মিষ্টি হাসি বসে তমাল বনে,
গন্ধরাজ ঘ্রাণ বিলিয়ে হাসে উদাস মনে।

রাতের বেলা দীঘির জলে চাঁদের আলো হাসে,
হাসি দিয়ে জোনাক পোকা আলো জ্বেলে আসে।

মধুমুখে মৌমাছির দল হেসে হেসে আসে
গুন গুনাগুন গান গেয়ে নীল ভ্রমরা হাসে।

প্রভাত বেলা রাঙা মুখে সূর্য্য মামা হেসে উঠে,
এত হাসির কান্ড দেখে দাদুর মুখেও হাসি ফুটে।

17

এই ফাগুনে রূপকুমারী
—জামাতুল ইসলাম পরাগ

ফাল্গুনের অই মাতাল হাওয়ায় হলুদ শাড়ি পরে
রূপকুমারী চলে আসে রূপের দোলায় চড়ে।
আমি তারে ডাকি ডাকি তবুও সে দেয় যে ফাঁকি
দুহাত দিয়ে আলতো করে কেমন করে পরাগ মাখি!

বুকের খাঁচায় পুষবো বলে রূপকুমারী যায় উড়ে
ইচ্ছে হলেও যায় না ধরা, বাঁধবো বলো কোন ডোরে
রূপকুমারী এবার আসো, আটকে দেবো ঘরের খিল
আর দেবো না পালিয়ে যেতে হবে শুধু সুখের মিল।

18

ফাল্গুন
—আল মামুন খান

শিমুলে আগুন জ্বেলে এলো ফাগুন
ফুলে ফুলে মৌমাছির মৃদু গুনগুন।
কোকিলের কুহু রবে ভরিল বাতাস
নীল রঙা শাড়ী পরে সাজিল আকাশ।
আমের শাখেতে এলো নতুন মুকুল
শুকালো নদীর জল শীর্ণ দুকুল।
সবুজের সজীবতা প্রতি শাখে শাখে
বনে বনে পাখীকুল উঠিল ডেকে।
দিকে দিকে বসন্তের পড়ে গেল সাড়া
আনমদ গুঞ্জনে জেগে গেল পাড়া।
দক্ষিণ দিক থেকে বহে সমীরণ
ফাগুনের শীতল হাওয়া জুড়ায় পরান।
বকুলের গন্ধেতে মৌ মৌ বন
ফাগুন খুশীতে ভরে সকলের মন।
চৈত্রের চাঁদিমার রুপালী আলো
ফাগুন বসন্ত তোমায় বেসেছি ভালো।।

19

আরেক ফাল্গুনে বলো ভালোবাসি
—রোদের ছায়া

এই ফাল্গুনে সাজিয়েছি অঞ্জলি
স্বপ্নের মায়াময় সৈকত
অবেলায় কুড়াতে আসি
ছড়ানো ঝিনুক-কড়ি।

শূন্য বুকের জমিনে পেতে নকশিকাঁথা
থালা ভরি মৌসুমী ফলে
পরানের গহিন ভিতরে
যেন তার স্মৃতিটুকু গাঁথা।

ফেরো যদি মখমল পথে নির্জনে
নিজেরে বিলাও দুই হাতে,
খরুচে মনের আগল খোলো
বসন্তের সমগ্র অর্জনে।

এই ফাল্গুনে প্রেম ঢলে আমি ভাসি
অশ্রু ভেজা বরমাল্য,
আরেক ফাল্গুন দুজনার অভিসারে
তুমি বলো ভালবাসি।

20

আবার এই ফাল্গুন
—মো: এনামুল হক

ফাল্গুনে ফুলবনে বিহঙ্গ কূজনে
আমরা ছিলাম শুধু দু'জনে একাই।

আজ বৈশাখী ঝড় ভাঙা বাসর ঘর
মনে হয় অভিশাপ,
নাকি এ মহাপাপ দুজন দুজনার মুখটা দেখাই।

চোঁখ বুজি, তাই বুঝি ভাত শালিকেরে খুঁজি
দেখেছে সে ভাঙানো তোমার অভিমান।

আমার হৃদয় জুড়ে যাচ্ছে শুধুই
পুড়ে জ্বলছে যেন এ শিখা-অনির্বান।

আবার এই ফাল্গুনে স্মৃতীর জালবুনে কেন লিখব মিছে,
প্রেমোপক্ষান।

শেষ কথা

আশাকরি বসন্তের কবিতাগুলো আপনার পছন্দ হয়েছে। আপনার সাড়া পেলে এখানে আমরা নিয়মিত নতুন নতুন বসন্তের কবিতা যুক্ত করে দিব। এখানের সংগ্রহ করা কোন কোন কবিতাগুলো আপনার কাছে সবচাইতে ভালো লেগেছে তা আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
[no_toc]
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url