রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ
অন্তরের দৃঢ় সংকল্পকে নিয়ত বলা হয়। মুখে বলা জরুরী নয়। রোজা রাখার জন্য রোজার নিয়ত করতে হয়। নিয়ত রোজার রোকন তথা শর্ত। আর ইবাদতের সওয়াবও নিয়তের উপর নির্ভরশীল। হাদিস শরিফে আছে “সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল (সহিহ বুখারী)।
নিয়তের ক্ষেত্রে সাধারণত আমরা দুই ধরনের ভূল করে থাকি। যেমন- কেউ কেউ শুধুমাত্র নিয়তের শব্দগুলো মুখে মুখে উচ্চারণ করেন। অন্তরে সংকল্প করেন না। আবার অনেকে নিয়তের শব্দগুলো মুখেও উচ্চারণ করেন না, অন্তরেও কোন কল্পনা উপস্থিত করেন না।
উপরোক্ত দুই শ্রেণীর কারোর রোজাই হবে না। এ সম্পর্কে আদ্দুররুল মুখতার প্রণেতার ভাষ্য হলো “নিয়তের ক্ষেত্রে অন্তরের সুদৃঢ় কর্মতৎপরতা গ্রহনযোগ্য। শুধু মুখের উচ্ছারণ গুরুত্বপূর্ণ নয়, যদি তা অন্তরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়। কেননা, শুধুমাত্র মুখের উচ্চারণকে কথা বলা হয়, নিয়ত বলা হয় না।
আমরা ইতোপূর্বে ইফতারের দোয়া ও ফজিলত নিয়ে একটি আর্টিকেল শেয়ার করেছি। তারই ধারবাহিকতায় আজকে রোজার নিয়ত, রোজায়র নিয়তের ফজিলত সহ আরো কিছু রোজার নিয়তের মাসয়ালা শেয়ার করব। আশাকরি আপনি রোজার নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে সেই মত আমল করতে পারবেন।
রোজার নিয়ত
রমজানের রোজা (সাওম) ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আমাদের বিশ্বাসের একটি অভিব্যক্তি যা আমাদের দুর্বলতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদেরকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে আসে। এমনকি যারা বছরের অন্যান্য সময়ে ইবাদতে ততটা আন্তরিক নয় তারাও প্রায়শই এই বরকতময় রমজান মাসে আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে পুরোপুরি নিবেদিত করে।
সেহরির অনেক শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উপকারিতা রয়েছে। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন "তোমরা সেহরি খাও, কেননা সেহরীতে বরকত রয়েছে” (সহিহ বুখারি)। আর আমরা সাধারণত সেহরীর সময় রোজার নিয়ত করি বিধায় সেরির গুরুত্ব অপরিসীম।
রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ
রোজার নিয়ত সংক্রান্ত মাসয়ালা
ফরজ রোজার নিয়ত রাত বাকি থাকতে করা উত্তম। উম্মুল মুমিনিন হযরত হাফসা (রা:) বলেন হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন “যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না তার রোজা পূর্ণাঙ্গ হবে না।
এই হাদিসকে ভিত্তি করে ইসলামি স্কলাররা বলেন, দিনের দ্বিপ্রহরের আগে রোজার নিয়ত করা না হয়ে থাকলে সেই রোজা সহিহ হবে না। এর পরও রোজাহীন অবস্থায় দিনের বাকি সময়ে পানাহার করা রমজানুল মোবারকের সম্মানের বিরোধী বলে তা জায়েজ নয় (ইমদাদুল ফাতওয়া ১)।
নফল রোজা, নির্দিষ্ট মানতের রোজা এবং রমজানের রোজা সমূহের নিয়ত রাতের বেলা অথবা শরিয়তের ঘোষিত দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত করা গেলেও অন্য সব ধরনের রোজার জন্য রাতেই নিয়ত করে নেওয়া জরুরী (ফাতওয়া দারুল উলুম ৬/৩৪)।
মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট। তবে “নাওয়াইতুআন” মুখে উচ্ছারণ করার মাধ্যমে নিয়ত করলেও সমস্যা নেই। রমজানের প্রতিদিনই রোজর নিয়ত করতে হবে। একদিন নিয়ত করলে পুরো রমজানের জন্য তা যথেষ্ট নয়। কারণ প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্য নিয়ত করা জরুরী। রাতের বেলায় মনে মনে রোজা রাখার ইচ্ছা নিয়ে শুয়ে পড়লে তার জন্য পুনরায় নিয়ত করার প্রয়োজন নেই।
রাতে (সেহরির সময় থাকা অবস্থায়) রোজার নিয়ত করলেও সুবহে সাদেক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী মিলনের অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোন ক্ষতি হবে না। অনেকে রাতের শুরুতে সেহরি খেয়ে শুয়ে পড়েন এবং মনে করেন রোজার নিয়ত করার পর বা সেহরি খেয়ে ফেলার পর আর কিছু পানাহার করা যাবে না। এমন ধারনা ঠিক নয়।
সুবহে সাদেক ষ্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে কোন দোষ নেই, নিয়ত করা হউক বা না হউক। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে “তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে রমজানের রাতে স্বীয় স্ত্রীর সঙ্গে প্রবৃত্ত হওয়া” (সুরা বাকারা আয়াত ১৮৭)।
রমজান মাসে সেহরি খাওয়াটাও রোজার নিয়ত বলে গণ্য হবে। তবে সেহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না (কিতাবুল ফিকা: ১)। নিয়তের শুরু হয় পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে।
যেমন- রবিবার রোজার নিয়ত শনিবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করা যায়। শনিবার সূর্যাস্তের পূর্বে রবিবারের রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেন না হাদিস শরিফে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে। হাদিসে আছে, হযরত হাফসা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বালেছেন, তার রোজা নেই, যে রাতে নিয়ত করেনি (মুসনাদে আহমাদ)।
শেষ কথা
রমজান মাস হলো আল্লাহর রহমত ও বরকতের মাস। এই মাসে রোজার নিয়ত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। রোজা শুধুমাত্র উপবাস থাকার নাম নয়; এটি আত্মশুদ্ধির মাধ্যম। আর নিয়ত হলো এই ইবাদতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
তাই আমাদের উচিৎ রোজার নিয়ত জেনে নিয়ে সেই সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং তা যথাযথভাবে পালন করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক নিয়মে রোজা পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।