ব্লগার নাকি ওয়ার্ডপ্রেস ভালো?
ব্লগিং জগতে পা রাখার শুরুতে সবার মনেই একটি সাধারণ প্রশ্ন জাগে—গুগল ব্লগার নাকি ওয়ার্ডপ্রেস? কোনটি দিয়ে শুরু করব? এই সিদ্ধান্তহীনতা নতুন ব্লগারদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ, সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচনই আপনার সফল ব্লগিং যাত্রার মূল ভিত্তি।
একটি ভুল সিদ্ধান্ত আপনার দীর্ঘমেয়াদী পরিশ্রম ও সময়ের অপচয়ের কারণ হতে পারে। তাই কেবল আবেগের বশে নয়, বরং ফিচার এবং এসইও (SEO) সুবিধার কথা বিবেচনা করে প্ল্যাটফর্ম বেছে নেওয়া জরুরি। কিন্তু দুই প্ল্যাটফর্মের আসল পার্থক্যটা আসলে কোথায়?
একদিকে আছে গুগলের সম্পূর্ণ ফ্রি ও নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম ‘ব্লগার’। যারা কোনো প্রকার খরচ ও কারিগরি ঝামেলা ছাড়াই লেখালেখি শুরু করতে চান, তাদের কাছে এটি জনপ্রিয়। কিন্তু প্রফেশনাল ব্লগিং বা অনলাইন আয়ের ক্ষেত্রে এটি কি দীর্ঘমেয়াদে যথেষ্ট কার্যকর?
অন্যদিকে, বিশ্বের জনপ্রিয়তম সিএমএস ‘ওয়ার্ডপ্রেস’ অফার করে অসীম কাস্টমাইজেশন সুবিধা। প্রফেশনাল ডিজাইন এবং অ্যাডভান্সড এসইও টুলের কারণে এটি এক্সপার্টদের প্রথম পছন্দ। তবে এর ডোমেইন-হোস্টিং খরচ এবং রক্ষণাবেক্ষণ কি নতুনদের জন্য বোঝা হতে পারে?
আপনার বাজেট ও ভবিষ্যতের লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে Blogger vs WordPress-এর মধ্যে কোনটি আপনার জন্য সেরা, তা জানতে এই আর্টিকেলটি সহায়ক হবে। চলুন, বিস্তারিত তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনার জন্য পারফেক্ট প্ল্যাটফর্মটি খুঁজে বের করি।
ব্লগার কি?
গুগল ব্লগার হলো গুগলের মালিকানাধীন একটি সম্পূর্ণ ফ্রি এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্লগ পাবলিশিং প্ল্যাটফর্ম। এটি ব্যবহারকারীদের কোনো প্রকার জটিল কোডিং জ্ঞান বা হোস্টিং খরচ ছাড়াই, খুব সহজে এবং দ্রুত নিজের একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করার সুযোগ দেয়।
এই প্ল্যাটফর্মে ব্লগ তৈরি করলে ডিফল্টভাবে ‘blogspot.com’ সাবডোমেইন পাওয়া যায়। গুগলের শক্তিশালী সার্ভারে হোস্ট হওয়ায় এটি অত্যন্ত নিরাপদ। যারা একদম বিনামূল্যে এবং কোনো কারিগরি জটিলতা ছাড়াই লেখালেখি বা ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করতে চান, তাদের জন্য ব্লগার একটি আদর্শ সমাধান।
ব্লগার এর সুবিধা কি?
ব্লগার একটি সম্পূর্ণ ফ্রি প্ল্যাটফর্ম যেখানে হোস্টিং এবং সাবডোমেইন বিনামূল্যে পাওয়া যায়। চাইলে আপনি নিজের কেনা কাস্টম ডোমেইনও যুক্ত করতে পারবেন। অর্থাৎ, কোনো বাড়তি খরচ ছাড়াই আপনি নিজের ব্লগিং যাত্রা শুরু করতে পারেন, যা নতুনদের জন্য বেশ সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক।
নতুনদের জন্য ব্লগারের ইন্টারফেস অত্যন্ত সহজ এবং বোধগম্য। কোনো প্রকার কোডিং জ্ঞান ছাড়াই আপনি অনায়াসে সম্পূর্ণ ব্লগ কন্ট্রোল করতে পারবেন। এর ড্যাশবোর্ড এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন প্রযুক্তিতে খুব বেশি দক্ষ না হয়েও যে কেউ এটি স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারে।
যেহেতু ব্লগার গুগলের একটি নিজস্ব সার্ভিস, তাই এর সার্ভার অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। এখানে নিরাপত্তা নিয়ে ব্যবহারকারীকে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না। গুগলের শক্তিশালী সিকিউরিটি সিস্টেম থাকার কারণে আপনার ব্লগের ডেটা সবসময় সুরক্ষিত থাকে, যা একজন ব্লগারের জন্য বিশাল সুবিধা।
ব্লগের মাধ্যমে আয় বা ভিজিটর ট্র্যাক করার জন্য গুগল অ্যাডসেন্স ও গুগল অ্যানালিটিক্স খুব সহজে ইন্টিগ্রেট করা যায়। গুগলের ইকোসিস্টেমের অংশ হওয়ায় এই টুলগুলো যুক্ত করতে কোনো জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় না, ফলে মনিটাইজেশন বেশ সহজ হয়ে ওঠে।
ব্লগারের ডেডিকেটেড মোবাইল অ্যাপ থাকার কারণে যেকোনো স্থান থেকে কাজ করা যায়। স্মার্টফোন ব্যবহার করে আপনি সহজেই নতুন পোস্ট লেখা, এডিট করা বা ছবি যুক্ত করার কাজগুলো করতে পারবেন। এটি ব্লগিংকে আরও গতিশীল ও সহজলভ্য করে তুলেছে।
গুগলের বিশাল অবকাঠামোর ওপর ভিত্তি করে চলায় ব্লগারের আপটাইম ও পারফরম্যান্স চমৎকার। এখানে সার্ভার ডাউন হওয়া বা সাইট স্লো হয়ে যাওয়ার ঘটনা খুব কম ঘটে। ফলে ভিজিটররা কোনো সমস্যা ছাড়াই আপনার ব্লগের কন্টেন্টগুলো দ্রুত দেখতে বা পড়তে পারে।
ব্লগার এর অসুবিধা কি?
ব্লগারের থিম এবং ডিজাইন অপশনগুলো বেশ সীমিত। ওয়েব ডিজাইন বা কোডিং সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে ব্লগটিকে একটি পেশাদার লুক দেওয়া বেশ কঠিন। ওয়ার্ডপ্রেসের মতো এখানে আধুনিক পেজ বিল্ডার নেই, তাই ডিজাইন কাস্টমাইজেশনে ব্যবহারকারীকে বেশ সীমাবদ্ধতা পোহাতে হয়।
ওয়ার্ডপ্রেসের মতো এখানে প্লাগইন ব্যবহারের সুযোগ নেই, ফলে ব্লগের ফাংশনালিটি বাড়ানো কঠিন। নতুন ফিচার যুক্ত করতে হলে ম্যানুয়ালি কোডিং করতে হয়, যা সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য জটিল। তাই আধুনিক ও বিচিত্র ফিচার সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট তৈরির জন্য এটি সবসময় উপযুক্ত হয় না।
এই প্ল্যাটফর্মে আপনার ব্লগের ওপর সম্পূর্ণ মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যেহেতু এটি গুগলের সার্ভিস, তাই তারা যেকোনো সময় তাদের পলিসি পরিবর্তন করতে পারে। এমনকি নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে গুগল চাইলে আপনার ব্লগটি যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দিতে পারে।
ভবিষ্যতে আপনি যদি ব্লগার ছেড়ে ওয়ার্ডপ্রেস বা অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে যেতে চান, তবে সেটি বেশ ঝামেলার হতে পারে। ব্লগের পোস্ট, কমেন্ট ও ছবিসহ সম্পূর্ণ ডেটা মাইগ্রেট করার প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল এবং প্রযুক্তিগতভাবে সময়সাপেক্ষ, যা অনেক সময় ভোগান্তির কারণ হয়।
ব্লগারের এসইও অপশনগুলো তুলনামূলকভাবে বেশ সাধারণ মানের। এখানে ওয়ার্ডপ্রেসের মতো অ্যাডভান্সড এসইও টুল বা প্লাগইন ব্যবহারের সুবিধা নেই। ফলে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করানোর জন্য মেটা ট্যাগ বা স্কিমা মার্কআপ কাস্টমাইজ করতে গিয়ে ব্যবহারকারীদের প্রায়ই সীমাবদ্ধতার মুখে পড়তে হয়।
ওয়ার্ডপ্রেস কি?
ওয়ার্ডপ্রেস হলো বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওপেন সোর্স কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS)। এর সাহায্যে কোনো প্রকার কোডিং জ্ঞান ছাড়াই যেকেউ খুব সহজে এবং দ্রুত নিজের বা ব্যবসার জন্য একটি চমৎকার ও প্রফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারেন।
এটি ব্যবহারের প্রধান সুবিধা হলো এর হাজার হাজার কাস্টমাইজযোগ্য থিম এবং প্লাগিন। ব্যক্তিগত ব্লগ থেকে শুরু করে বড় ই-কমার্স শপ পর্যন্ত যেকোনো ধরণের ওয়েবসাইট বানাতে ওয়ার্ডপ্রেস অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এছাড়া এটি এসইও ফ্রেন্ডলি হওয়ায় গুগলে সাইট র্যাঙ্ক করা বেশ সহজ।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, ওয়ার্ডপ্রেস এর দুটি ভার্সন রয়েছে। একটি হচ্ছে WordPress.Org এবং অন্যটি হলো WordPress.Com. এই পোস্টে যখন আমরা ওয়ার্ডপ্রেস এর সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করব তখন আপনাকে ধরে নিতে হবে যে, WordPress.Org নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। কারণ WordPress.Com ব্লগারের চাইতে আরো নরমাল।
WordPress.Com এবং WordPress.Org এর মধ্যে পার্থক্য কি?
Blogger দিয়ে নাকি WordPress দিয়ে ব্লগিং শুরু করবেন সে বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা নেয়ার পূর্বে WordPress.Com এবং WordPress.Org এই দুই এর মধ্যে পার্থক্য কি সেটি ভালভাবে জেনে নিতে হবে।
WordPress.Com এবং WordPress.Org যদিও বিষয়টি শুনতে আপাত দৃষ্টিতে এক মনে হচ্ছে, কিন্তু দুটির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ দুটি বিষয় নিয়ে লিখার পূর্বে একটি কথা সংক্ষেপে বলে রাখছি যে, WordPress.Com হচ্ছে WordPress এর একটি ফ্রি বেসিক ভার্সন। এটি আপনি সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন।
অন্যদিকে WordPress.Org হচ্ছে WordPress এর পরিপূর্ণ প্রফেশনাল ভার্সন, যেটি আপনাকে টাকার বিনিময়ে হোস্টিং কিনে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এটির পরিপূর্ণ কন্ট্রল এবং দায় আপনাকে নিজেই বহন করতে হবে।
ওয়ার্ডপ্রেস এর সুবিধা কি?
ওয়ার্ডপ্রেসে আপনার ওয়েবসাইট এবং সমস্ত ডেটার ওপর আপনার সম্পূর্ণ মালিকানা বজায় থাকে। এখানে ব্লগের নিয়ন্ত্রণ অন্য কারো হাতে থাকে না, যা থার্ড-পার্টি প্ল্যাটফর্মে ঝুঁকির কারণ হতে পারে। অর্থাৎ, আপনার সাইটের একমাত্র নিয়ন্ত্রক আপনি নিজেই, যা দীর্ঘমেয়াদে অত্যন্ত নিরাপদ ও সুবিধাজনক।
হাজার হাজার ফ্রি এবং প্রিমিয়াম থিম ও প্লাগইন ব্যবহার করে আপনি মনের মতো ডিজাইন তৈরি করতে পারেন। এই প্ল্যাটফর্মে সাধারণ ব্লগের পাশাপাশি অনলাইন স্টোর, ফোরাম বা মেম্বারশিপ সাইট তৈরি করা সম্ভব। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে যেকোনো ধরনের ফাংশনালিটি সহজেই যোগ করা যায়।
ওয়ার্ডপ্রেসে Yoast SEO বা Rank Math-এর মতো শক্তিশালী প্লাগইন ব্যবহার করে অ্যাডভান্সড এসইও সেটিংস ঠিক করা যায়। এটি সার্চ ইঞ্জিনে আপনার সাইটকে দ্রুত র্যাংক করাতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফলে অর্গানিক ট্রাফিক বৃদ্ধি করা এখানে অনেক বেশি সহজ ও কার্যকর হয়।
ওয়ার্ডপ্রেসের ব্যবহারকারী এবং ডেভেলপারদের বিশ্বজুড়ে একটি বিশাল কমিউনিটি রয়েছে। কোনো সমস্যায় পড়লে অনলাইন ফোরাম, টিউটোরিয়াল বা গ্রুপ থেকে দ্রুত সমাধান পাওয়া যায়। এই ব্যাপক সহায়তার কারণে নতুনরা খুব সহজেই টেকনিক্যাল বা যেকোনো ধরনের জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারে, যা বেশ স্বস্তিদায়ক।
সময়ের সাথে সাথে আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট যত বড়ই হোক না কেন, ওয়ার্ডপ্রেস তা সহজেই সামলাতে পারে। ছোট ব্লগ থেকে শুরু করে বিশাল এন্টারপ্রাইজ ওয়েবসাইট পর্যন্ত সবকিছুই এর মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব, যা ভবিষ্যৎ ব্যবসার প্রসারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুবিধা।
এখানে শুধু গুগল অ্যাডসেন্স নয়, বরং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, স্পনসরড পোস্ট বা নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি করেও আয় করা সম্ভব। আয়ের উৎস বা পদ্ধতির ওপর কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় একজন ব্যবহারকারী স্বাধীনভাবে তার ব্লগকে বিভিন্ন উপায়ে এবং কৌশলে মনিটাইজ করার সুযোগ পান।
ওযার্ডপ্রেস এর অসুবিধা কি?
ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করতে হলে আপনাকে ডোমেইন নেম এবং ভালো মানের ওয়েব হোস্টিং কিনতে হবে। ডোমেইনের জন্য বছরে প্রায় ১০-১৫ ডলার এবং হোস্টিংয়ের জন্য মাসে ৩-২৫ ডলার খরচ হতে পারে। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি নয়, তাই এখানে প্রাথমিক বিনিয়োগ করা বাধ্যতামূলক।
ব্লগারের তুলনায় ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার শিখতে কিছুটা বেশি সময় লাগে। এর ড্যাশবোর্ড ও ফিচারগুলো বিস্তারিত হওয়ায় নতুনদের মানিয়ে নিতে সময় দরকার হয়। এই প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে যথেষ্ট কারিগরি জ্ঞান না থাকলে সাইটটি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করা আপনার জন্য কঠিন হতে পারে।
যেহেতু সাইটের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে, তাই এর নিরাপত্তা ও ব্যাকআপের দায়িত্বও আপনাকেই নিতে হবে। হ্যাকিং থেকে বাঁচতে নিজেকেই সিকিউরিটি ব্যবস্থা করতে হয়। নিয়মিত ডেটা ব্যাকআপ না রাখলে যেকোনো সময় আপনার গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটটি বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
ওয়ার্ডপ্রেস সাইট সচল ও নিরাপদ রাখতে এর কোর ফাইল, থিম এবং প্লাগইনগুলো নিয়মিত আপডেট করতে হয়। এসব রক্ষণাবেক্ষণের কাজে অবহেলা করলে সাইট ভেঙে যেতে পারে। তাই টেকনিক্যাল বিষয়গুলো ঠিকঠাক পরিচালনা করার জন্য আপনার পর্যাপ্ত জ্ঞানের প্রয়োজন হবে।
WordPress.Com এর অসুবিধা কি?
ফ্রি প্ল্যানে ওয়ার্ডপ্রেস.কম আপনার ব্লগে তাদের নিজস্ব বিজ্ঞাপন দেখাবে, যা থেকে আপনি কোনো আয় পাবেন না। আপনি যদি এই বিজ্ঞাপনগুলো সরাতে চান, তবে আপনাকে প্রিমিয়াম প্ল্যানে আপগ্রেড করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
মাসে ২৫,০০০ পেজ ভিউ না হওয়া পর্যন্ত আপনি নিজের পছন্দমতো বিজ্ঞাপন ব্যবহার করতে পারবেন না। এই সীমা পার হওয়ার পরও বিজ্ঞাপনের আয়ের ৫০ শতাংশ তাদের দিতে হবে, যা একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের জন্য বেশ হতাশাজনক ও লোকসানের কারণ।
ওয়ার্ডপ্রেসের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর প্লাগইন ব্যবস্থা, কিন্তু ওয়ার্ডপ্রেস.কমের ফ্রি বা সাধারণ প্ল্যানে আপনি কোনো প্লাগইন ইনস্টল করতে পারবেন না। ফলে সাইটের ফাংশনালিটি বা ফিচার বাড়ানোর কোনো সুযোগ থাকে না, যা একটি বড় সীমাবদ্ধতা।
এখানে আপনি বাইরের কোনো কাস্টম থিম আপলোড করতে পারবেন না, শুধুমাত্র তাদের লাইব্রেরিতে থাকা থিমগুলোই ব্যবহার করা যাবে। ফলে আপনার ব্লগকে একটি ইউনিক ও প্রফেশনাল লুক দেওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে এবং ডিজাইনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থেকেই যায়।
ওয়ার্ডপ্রেস.কম আপনাকে সাইটে কোনো কাস্টম কোড বসাতে দেয় না, তাই আপনি গুগল অ্যানালিটিক্স বা অন্য কোনো ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবেন না। ফলে ভিজিটরদের আচরণ বিশ্লেষণ করা বা সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া আপনার জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
আপনি যদি তাদের টার্মস অফ সার্ভিস বা নীতিমালার কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেন, তবে তারা যেকোনো সময় আপনার সাইটটি ডিলিট করে দিতে পারে। যেহেতু সাইটের পূর্ণ মালিকানা আপনার নয়, তাই কষ্টার্জিত ব্লগটি হারানোর ঝুঁকি সবসময়ই থাকে।
ডেভেলপারদের হাতে থিমগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকায়, তারা আপনার অনুমতি ছাড়াই সাইটের থিম বা ডিজাইন পরিবর্তন করতে পারে। হঠাৎ করে সাইটের লুক পরিবর্তন হয়ে গেলে তা ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং ভিজিটরদের বিভ্রান্ত করার সম্ভাবনা তৈরি করে।
আপনি যদি থিমের উন্নত ফিচার বা কাস্টমাইজেশন সুবিধা (যেমন CSS এডিট) পেতে চান, তবে আপনাকে প্রিমিয়াম প্ল্যান কিনতে হবে। বিনামূল্যে বা সাধারণ প্ল্যানে থিম আপগ্রেড করার সুযোগ নেই, যা ভালো ডিজাইনের জন্য অর্থ খরচ করতে বাধ্য করে।
ব্লগার এবং ওয়ার্ডপ্রেস এর পার্থক্য কি?
| গুগল ব্লগার | ওয়ার্ডপ্রেস |
|---|---|
| ডোমেইন নেইম | |
| গুগল ব্লগারের ক্ষেত্রে ডোমেন নেম এর গঠন হবে example.blogspot.com | এটির গঠন আপনার ইচ্ছানুযায়ি টাকার বিনিময়ে কিনে নিতে পারেন। |
| আপনি ইচ্ছে করলে Pre-Regester ডোমেন নেম ব্যবহার করতে পারেন। | অবশ্যই আপনাকে 10/15 ডলারের বিনিময়ে নিজস্ব ডোমেন কিনতে হবে। |
| হোস্টিং স্টোরেজ | |
| 1 GB পর্যন্ত ফ্রি Storage Space পাওয়া যায়। | মাসিক কমপক্ষ্যে 4-10 ডলারের বিনিময়ে প্রয়োজনীয় Storage Space কিনতে হবে। |
| Google Drive এর সাথে কনেক্ট করে ফ্রিতে Storage Space বাড়ীয়ে নিতে পারবেন। | টাকার বিনিময়ে আপনি যত খুশি তত Storage Space বাড়ীয়ে নিতে পারেন। |
| কাস্টমাইজ করা | |
| টেমপ্লেট কাষ্টমাইজ করতে পারবেন। | থিমস কাষ্টমইজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। |
| যে কোন ধরনের কোডিং করা যায় না। | এটিতে যে কোন ধরনের কোডিং করতে পারবেন। |
| ব্লগ ডিজাইন | |
| ইচ্ছা করলেই যে কোন ধরনের ডিজাইন করা যাবে না। | এটিতে যে কোন ধরনের ডিজাইন করা যাবে। |
| Variable ব্যবহার করে সহজে করে থিম ডিজাইন ও পরিবর্তন করা যায়। | ড্রাগ এন্ড ড্রপ করে সহজে ডিজাইন করা যায়। |
| প্লাগইন | |
| প্লাগইন ব্যবহার করার সুযোগ নেই। | বিভিন্ন ধরনের প্লাগইন ব্যবহার করা যায়। এটাই ওয়ার্ডপ্রেস এর বড় সুবিধা। |
| শুধুমাত্র কয়েকটি Gadget ব্যবহার করা সম্ভব। | ইচ্ছামত বিভিন্ন Functions ব্যবহার করা সম্ভব। |
| মনিটাইজেশন | |
| Google Adsense থেকে ইনকাম করার সুযোগ রয়েছে। | এখানেও Google Adsense থেকে আয় করার সুযোগ রয়েছে। |
| যে কোন ধরনের এ্যাড মনিটাইজ করা যায়। | এটিতেও যে কোন ধরনের এ্যাড মনিটাইজ করা যায়। |
Blogger নাকি WordPress?
আমি আগেও বলেছি দুটিই ভালমানের ব্লগিং প্লাটফর্ম। তবে একটি সম্পূর্ণ ফ্রি এবং অন্যটি হোস্টিংয়ের জন্য আপনাকে মাসে 4-5 ডলার ব্যয় করতে হবে। তবে যেহেতু WordPress ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে অর্থের বিনিময়ে হোস্টিং কিনে ব্যবহার করতে হয় সেহেতু এটিতে ব্লগারের তুলনায় কিছুটা হলেও বাড়তী সুবিধা পাবেন।
তবে আমার পরামর্শ হবে, আপনি যদি ব্লগিংয়ে নতুন হন কিংবা ব্যক্তিগতভাবে ব্লগিং কারতে চান, তাহলে অবশ্যই গুগল ব্লগার বেছে নেয়ার জন্য। অন্যদিকে আপনি যদি ব্যবসায়িক বা প্রতিষ্ঠানের জন্য কিংবা প্রফেশানাল ব্লগিং করতে চান, তাহলে অবশ্যই কিছু টাকা খরছ করে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে ব্লগিং করবেন।
CMS মার্কেট শেয়ার (২০২৫)
শেষ সিদ্ধান্ত
আশা করি, Blogger এবং WordPress নিয়ে আমাদের বিস্তারিত আলোচনা আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে। আমরা দেখলাম, Blogger একটি ফ্রি, সহজ এবং গুগল-ইন্টিগ্রেটেড প্ল্যাটফর্ম, যা নতুন এবং সাধারণ ব্লগারদের জন্য দারুণ একটি সূচনা হতে পারে। যাহার সরল ইন্টারফেস এবং হোস্টিংয়ের চিন্তা না থাকায় সহজেই ব্লগিং শুরু করা যায়।
অন্যদিকে, WordPress হলো একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ফ্লেক্সিবল প্ল্যাটফর্ম, যা আপনাকে আপনার সাইটের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেয়। হাজার হাজার থিম, প্লাগইন এবং কাস্টমাইজেশনের অফুরন্ত সুযোগ এটিকে পেশাদার ব্লগার, ব্যবসা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার জন্য আদর্শ করে তোলে। যদিও এর জন্য ডোমেইন এবং হোস্টিংয়ের খরচ বহন করতে হয় এবং কিছুটা শেখার প্রয়োজন পড়ে, তবে এর সম্ভাবনা অফুরন্ত।
শেষ পর্যন্ত, "Blogger নাকি WordPress, কোনটি ভালো?" – এই প্রশ্নের উত্তরটি আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা, বাজেট, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং ব্লগিংয়ের লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে। যদি সরলতা এবং শূন্য খরচ আপনার প্রধান চাহিদা হয়, তবে Blogger বেছে নিতে পারেন। আর যদি আপনি আপনার সাইটের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, উন্নত ডিজাইন এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি চান, তবে WordPress আপনার জন্য সেরা বিকল্প হতে পারে।
আপনার সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, ব্লগিংয়ের যাত্রা উপভোগ করুন! আপনার অভিজ্ঞতা বা পছন্দের প্ল্যাটফর্ম কোনটি, তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। সেই সাথে আপনার ব্যক্তিগত কোন পছন্দ বা আমাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করলে তাও জানাতে পারেন।
Thanks Brother!
Thanks bro, very infnormative article
Welcome
ভাই আপনার এই পোস্ট এ মিল ও পার্থক্য এর পাশাপাশি এটাও বলা উচিত ছিল যে ওয়ার্ডপ্রেস নিজে হোস্টিং কিনে লাগানো যায়।
পোষ্টের Storage Space টেবিলের মধ্যে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে WordPress এর প্রয়োজনীয় সকল Storage Space মাসিক 4-7 ডলারের বিনিময়ে কিনতে হয়। অধিকন্তু পূর্বের পোষ্টে আমরা WordPress এর সুবিধা-অসুবিধা সহ আরো বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ধন্যবাদ...
খুব ভাল লাগলো পড়ে
আপনার ব্লগটি কি blogger.com থেকে তৈরি ?
আশা করছি জানাবেন ।
হ্যা ভাই, আমার ব্লগটা Google Blogger দিয়ে তৈরী।
Thanks
thanks;you are my solved my problem.
Welcome and stay us for better future update.
আমি ব্লগার দিয়ে এই ব্লগ তৈরী করেছি এইখানে কি ডোমেইন এ্যাড করা যাবে itpeark.blogspot.com
করতে পারবেন, ইনফেক্ট আমার ব্লগটাও ব্লগার দিয়ে তৈরি।
দারুণ একটি লেখা,অনেক ভালো তথ্য পেলাম।আমার ব্লগ www.arifurblog.blogspot.com
Thanks and stay us to our next update...
Thanks
ব্লগার দিয়ে খুললে কি ইনকাম হবে?
হোস্টিং না কিনলে কি ইনকাম করতে পারবনা??
জানাবেন প্লিজ
অবশ্যই করতে পারবেন। ভালোমানের কন্টেন্ট থাকলে অবশ্যই করা সম্ভব।
ধন্যবাদ আপনাকে। আমার একটা ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট আছে। আমরা কয়েকজন মাদরাসা পড়ুয়া মিলে একটা প্লাটফরম খুলতে চািই। যেখানে আলেমদের লেখা প্রবন্ধ, বয়ান ও বক্তৃতার অনুলিপি, অডিও-ভিডিও সব থাকবে। যদি এমনটি করি তাহলে আমাদের কেমন খরচ পড়বে। আমরা কেউ এখনও কোন জব টব করি না। তাই টাকা পয়সা ইনভেস্ট করার সুযোগ আমাদের নেই। সাজেশন দেওয়ার অনুরোধ রইল।
আর আমার ওয়েবসাইটের লিংক https://mohibbullah.com/
আপনি এই লিংকে ক্লিক করে পোস্টটি পড়ুন, আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
https://www.bloggerbangladesh.com/2020/04/create-free-website.html
অনেক সুন্দর পোস্ট করেছেন।
ধন্যবাদ, সাথে থাকুন।
আমার কিছু জানার ছিল যে,
ব্লগ খোলার আগে "কাস্টম ডোমেইন" কিনে তারপর ব্যবহার করতে হবে? নাকি ব্লগ সাইট খোলার পর যেকোনো সময় আমি "কাস্টম ডোমেইন" কিনে তারপর আমার ব্লগে ব্যবহার করতে পারবো? ব্লগারের অফিসিয়াল "সাব ডোমেইন" দিয়ে ব্লগ খুলে ভালো মানের কনটেন্ট লিখে বা শেয়ার করে কি আমি Google Adsense এর জন্য আবেদন করলে গুগল আমার আবেদন গ্রহণ করবে? Adsense পাবার জন্য কি আগে থেকে "কাস্টম ডোমেইন" কিনে ব্লগ খোলার সময় ব্যবহার করতে হবে? "সাব ডোমেইন " দিয়ে ব্লগিং করে ভালো মানের কনটেন্ট থাকলে গুগল আমার আবেদন গ্রহণ করবে না?
অগ্রিম ধন্যবাদ ভাই।
ব্লগে ভালোমানের আর্টিকেল থাকলে ব্লগারের অফিসিয়াল "সাব ডোমেইন" দিয়েও এডসেন্স অনুমোদন পাওয়া যায়। তবে আমার মতে ব্লগিং শুরু করা জন্য মিনিমাম একটি ডোমেইন নিয়ে ব্লগ শুরু করা উচিত। কারণ ব্লগ যখন জনপ্রিয় হয়ে উঠবে তখন টপ ডোমেইন ছাড়া ভিজিটরের কাছে ব্লগের গ্রহনযোগ্যতা পাবে না।
তাছাড়া বর্তমানে একটি ডটকম ডোমেইন মাত্র ৭/৮ শত টাকায় কিনতে পাওয়া যায়। সুতরাং একটি টপ ডোমেইন দিয়ে ব্লগ শুরু করুন।
ব্লগারে custom domain এ SSL certificate কিভাবে রোগ করব?
এ বিষয়ে আমাদের ব্লগে একটি বিস্তারিত পোস্ট আছে। পোস্টটি পড়লে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ধন্যবাদ...
ধন্যবাদ ভাই
"আগামী পোস্টে আলোচনা করবো " এরকম একটা লেখা আছে। সম্ভবত ভুল হয়েছ, বিষয়টি এই পোস্টেরই আলোচ্য বিষয়এবং আলোচনা করছেন। আমি আপনার লেখা নিয়মিত পরি। নিজে একটি ব্লগ শুরু করেছি। আপনার ব্লগটি কি ব্লগার নাকি ওয়ার্ডপ্রেস? আরেকটা বিষয় নিয়ে লিখবেন আশা করি, আপনার এই ব্লগটা থেকে মাসে কত ইনকাম? অনেকেই বাংলা ব্লগে লিখতে নিরুৎসাহিত করে। ধন্যবাদ।
সংশোধন করা হয়েছে।
আমাদের ব্লগটি গুগল ব্লগার দিয়ে তৈরি করা। আসলে আমার প্রফেশনাল ব্যস্ততার কারনে ব্লগে নিয়মিত কাজ করতে পারি না। তারপরও প্রতি মাসে প্রায় ১০০/১৫০ ডলার ইনকাম হয়। তবে আমি যখন আগে নিয়মিত কাজ করতাম তখন প্রতিদিন ৪০/৪৫ ডলার ইনকাম করার মত রেকর্ড আছে।
ইংরেজি ব্লগের কাজ করতে পারলে ভালো। তবে বাংলা ব্লগ একদাম খারাপ নয়। ভালো অভীজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই ইংরেজী ব্লগ চালু করার পরামর্শ দেব।
ধন্যবাদ...
Nice